মহান আল্লাহ কুরআনে বলেন :
নিশ্চয়ই আমি আমার রসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও তুলাদন্ড (ন্যায়-নীতি); যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি লোহা অবতীর্ণ করেছি; যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি ও রয়েছে মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ, আর যাতে আল্লাহ জানতে পারেন যে, কে না দেখেও তাঁকে ও তাঁর রসূলদেরকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
- সূরা আল হাদীদ, আয়াত ২৫
উপরিউক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তিনটি জিনিসের কথা উল্লেখ করেছেন:
১. কিতাব (গ্রন্থ) — যা জ্ঞান ও দিকনির্দেশনা দেয়।
২. তুলাদণ্ড (ন্যায়নীতি) — যা সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে।
৩. লোহা (Iron) — যাতে আছে শক্তি ও উপকারিতা।
আজকের লেখায় আলোচনা করবো লোহা (Iron) নিয়ে। অর্থাৎ আল্লাহ বলেছেন তিনি লোহা অবতীর্ণ করেছেন। এর মানে হচ্ছে লোহা পৃথিবীতে তৈরি হয় নি, বরং অবতীর্ণ হয়েছে। লোহা যে পৃথিবীতে তৈরি হয়নি সেটা আধুনিক বিজ্ঞান স্বীকার করে নিয়েছে।
বিজ্ঞান বলছে,
পৃথিবীতে লোহা (Fe) নিজে থেকে তৈরি হয়নি। লোহা হলো একটি মৌল (element), যা নক্ষত্রের কেন্দ্রে তৈরি হয়। প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে হয়? বিশাল নক্ষত্রের অভ্যন্তরে কোটি কোটি ডিগ্রি তাপমাত্রায় নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, কার্বন, অক্সিজেন, সিলিকন এসব মিলে লোহা তৈরি হয়।
একবার লোহা তৈরি হয়ে গেলে, নক্ষত্র আর শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। ফলে নক্ষত্র ভেঙে পড়ে এবং ভয়ংকর সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটে। মূলত এই বিস্ফোরণের মাধ্যমে লোহা ও অন্যান্য ভারী মৌলগুলো মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে এই ধূলিকণা ও উপাদানগুলো একত্র হয়ে নতুন গ্রহ (যেমন পৃথিবী) তৈরি করে। অর্থাৎ, লোহা আসলেই 'আসমান থেকে নেমে এসেছে'।
NASA-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে:
'Iron is formed in the cores of massive stars and spread through space when those stars explode as supernovae.'
(Source: NASA – Imagine the Universe) https://imagine.gsfc.nasa.gov
এটা স্পষ্ট যে লোহা আসমান থেকেই পৃথিবী এসেছে। অর্থাৎ কুরআনে লোহা অবতীর্ণ হওয়া আয়াতটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক। অবিশ্বাসী'রা কি তবুও বিশ্বাস করবে না?
পৃথিবীতে লোহা তৈরি করা সম্ভব কি? উত্তর হচ্ছে - না। মানুষ লোহা তৈরি করতে পারে না। কারণ এটি একটি মৌল (element), কোনো যৌগ নয়। মানুষ যা করে তা হলো - খনিজ পদার্থ যেমন হেমাটাইট বা ম্যাগনেটাইট থেকে লোহা উত্তোলন (extraction)। অর্থাৎ, পৃথিবীতে আগে থেকেই থাকা লোহাকে আলাদা করে ব্যবহার করা হয়। এটি কোনো নতুন সৃষ্টি নয়, বরং অবতীর্ণ পদার্থের ব্যবহার।
আরবিতে (anzalna) মানে শুধু 'নামানো' নয়, বরং উপর থেকে প্রেরণ করা। যেমন বৃষ্টি, কিতাব, ওহি এগুলোর ক্ষেত্রে 'অবতীর্ণ' বলা হয়। অর্থাৎ, কুরআন এখানে বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক শব্দ ব্যবহার করেছে। যা ১৪০০ বছর আগে বলা হয়েছিল, অথচ আধুনিক বিজ্ঞান তা ২০ শতকে এসে আবিষ্কার করেছে।
কুরআনে আয়াতটিতে আরো বলা হয়েছে:
'লোহায় রয়েছে প্রচণ্ড শক্তি এবং মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ।'
বৈজ্ঞানিকভাবে এটাও শতভাগ সত্য। লোহা পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী ধাতু। এটি দিয়ে অস্ত্র, মেশিন, সেতু, ভবন, গাড়ি সব কিছু তৈরি হয়। রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে লোহা অপরিহার্য। প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, শিল্প, কৃষি সব ক্ষেত্রেই লোহা প্রধান উপাদান। পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে (core) থাকা লোহা চৌম্বক ক্ষেত্র (magnetic field) তৈরি করে, যা পৃথিবীকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
১৪০০ বছর আগে কোনো মানুষ, বিশেষত মরুভূমিতে বসবাসকারী এক নিরক্ষর নবী,
কীভাবে জানতেন যে লোহা পৃথিবীতে অবতীর্ণ উপাদান? সেই সময়ে টেলিস্কোপ, পরমাণু তত্ত্ব, নক্ষত্রবিজ্ঞান কিছুই ছিল না। অথচ কুরআন এমন ভাষায় বলেছে, যা আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। তাই নিঃসন্দেহে এটি কোনো মানবীয় জ্ঞান নয়; এটি স্রষ্টার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ জ্ঞান। কুরআন এমন জ্ঞান ধারণ করে যা মানুষের জ্ঞান সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আজ বিজ্ঞান যা আবিষ্কার করছে, কুরআন তা ১৪০০ বছর আগেই ঘোষণা করেছে।
'তারা কি বলে যে, 'এটা তার (নবীর) স্বরচিত?' তুমি বল, 'তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা আনয়ন কর এবং (এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য) আল্লাহ ব্যতীত যাকে ডাকতে পার ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।'
- সূরা ইউনুস, আয়াত ৩৮
- Tushar Ahmed
Rate This Article
Thanks for reading, লোহা (Iron) এবং আল-কোরআন! Stay blessed.
